Marxists Internet Archive
Bangla Section
জার্মান ভাবাদর্শ
কার্ল মার্কস
ক. ইতিহাস
জার্মানরা কোন কিছু স্বতঃসিদ্ধায়িত করে না। আর যেহেতু আমাদের জার্মানদের নিয়ে, কাজ কারবার সেহেতু আমাদের অবশ্যই সমগ্র মানব অস্তিত্বের প্রথম প্রাকসিদ্ধান্ত বিবৃত করা দিয়ে শুরু করতে হবে। এর মানেই তাই সমগ্র ইতিহাসের প্রাকসিদ্ধান্তের বিবৃতি। এই প্রাকসিদ্ধান্তটি বললে এমন হয় : মানুষকে ইতিহাস তৈরী করতে হলে অবশ্যই বেঁচে থাকার অবস্থায় থাকতে হবে। সব কিছুর আগে জীবনের জন্য প্রয়োজন খাবার, পানি, বাসস্থান, কাপড় চোপড়- আরো অনেক কিছু। তাই প্রথম ঐতিহাসিক কাজটি হচ্ছে এই প্রয়োজনগুলো মেটাবার উপায় তৈরী করা- খোদ বস্তুগত জীবনেরই উৎপাদন। এটা আসলেও একটা ঐতিহাসিক কাজ, সমস্ত ইতিহাসের এক মৌলিক শর্ত। আজ যেমন, হাজার বছর আগে থেকেও তেমনি প্রতিদিন প্রতিঘন্টা এই প্রয়োজন পূর্ণ করতে হচ্ছে নিছক মানবজীবন টিকিয়ে রাখতে। এমনকি সংবেদনগত জগত যখন সাধু ব্রুনোর(১৬) হাতে পড়ে ন্যূনতম মাপকাঠি হয়ে যায় তখনো মাপকাঠিটা বানানোর ক্রিয়াকলাপ পূর্বানুমান করে নিতে হয়। ইতিহাসের কোন তত্ত্বের জন্য তাই প্রথম প্রয়োজন হচ্ছে এই মৌলিক ব্যাপারগুলোকে তার সমস্ত বৈশিষ্ট্য, সমস্ত প্রয়োগ আর তাদের যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা। বেয়াড়া জার্মানরা একাজটা কখনো করেনি, আর তাই ইতিহাসের জন্য তাদের কোন জাগতিক ভিত্তি ছিল না। ফলে তাদের মাঝে কোন ঐতিহাসিকও ছিল না। ফরাসি এবং ইংরেজরা অন্ততঃ ইতিহাস লেখার কাজকে একটা প্রথম বস্তুগত ভিত্তি দেয়ার চেষ্টা করেছে সিভিল সমাজ, বাণিজ্য আর শিল্পের প্রথম ইতিহাসবিদ হিসেবে। তবু তারাও তথাকথিত ইতিহাসের সঙ্গে মৌলিক ব্যাপারগুলোর সম্পর্ককে শুধুমাত্র চরম একপেশে কেতায় ধারণা করেছে, বিশেষ করে যতক্ষণ তারা রাজনৈতিক ভাবাদর্শ নিয়ে গলদঘর্ম হয়েছে।
দ্বিতীয় মৌলিক ব্যাপারটা হচ্ছে- যখনি একটা চাহিদা পূর্ণ হয়, (যার অর্থ সেই চাহিদা পূরণের ক্রিয়াকলাপ আর একটা হাতিয়ারের দখল) তখনি নতুন চাহিদা তৈরী হয়। আর এই নতুন চাহিদা উৎপাদনই হচ্ছে প্রথম ঐতিহাসিক কাজ। সঙ্গে সঙ্গে আমরা জানতে পাই জার্মানদের মহান ঐতিহাসিক প্রঞ্চার মরমী পিতৃপুরুষদের। এই জার্মানদের যখন ইতিবাচক মালমশলার ঘাটতি পড়ে, যখন তারা ধর্মতাত্ত্বিক, রাজনৈতিক বা কাব্যিক আবর্জনা আর পাতে তুলে দিতে পারে না, তখন তারা ইতিহাস লেখা একেবারে বন্ধ রেখে প্রাগৈতিহাসিক যুগ আবিষ্কার শুরু করে।
কিভাবে আমরা এই হাবিজাবি প্রাক-ইতিহাস থেকে প্রকৃত ইতিহাসে পৌঁছাই তা জানিয়ে তারা আমাদের কৃতার্থ করেন না। অপরদিকে তাদের ঐতিহাসিক দূর-কল্পনায় তারা বিশেষ আগ্রহ নিযে এই প্রাক- ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরে রাখেন। কারণ ওখানে তারা আকাট ঘটনার ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকেন। আবার একই সময়ে দূর-কল্পনার পালে হাওয়া লাগিয়ে তারা হাজারটা হাইপোথিসিস সৃষ্টি আর নিধন করতে পারেন।
তৃতীয় অবস্থাটি একেবারে প্রথম থেকে ঐতিহাসিক বিকাশে ঢুকে পড়েছে। এই অবস্থাটি হল, যে মানুষ প্রতিনিয়ত নিজের জীবন পুনঃনির্মাণ করে, সে অন্য মানুষও নির্মাণ শুরু করে তাদের প্রজাতি বিস্তারের জন্য। পুরুষ এবং স্ত্রীর, পিতা-মাতা এবং সন্তানের, পরিবারের মাঝের সম্পর্ক শুরুর দিকে একমাত্র সামাজিক বন্ধন ছিল। পরে তা বাড়ন্ত প্রয়োজনের সাথে সৃষ্ট নতুন সামাজিক সম্পর্ক আর বাড়তি জনসংখ্যার সাথে নতুন চাহিদাতে একটি অধীন ব্যাপার হয়ে যায় (জার্মানী ছাড়া); আর তাই একে বহাল অভিঞ্চতাগত উপাত্ত দিয়ে বিচার এবং বিশ্লেষণ করতে হবে,* জার্মানে যেমন রীতি- পরিবার সংক্রান্ত ধারণা দিয়ে নয়। সমাজ ক্রিয়াকান্ডের তিনটি প্রেক্ষাপটকে অবশ্যই তিনটি বিচ্ছিন্ন স্তর হিসেবে নিলে হবে না। বরং একে নিতে হবে, আমি যেমন বললাম, তিনটি প্রেক্ষাপট হিসেবে; অথবা জার্মানদের বুঝিয়ে বলতে গেলে বলতে হবে- তিনটি ক্ষণ(১৭)। এগুলো ইতিহাসের প্রভাতকাল আর প্রথম মানুষদের থেকে সমান্তরালে চলে আসছে আর এখনো আজকের ইতিহাসে নিজেদের বিবৃত করছে।
জীবনের উৎপাদন, নিজের শ্রমে জীবন যাপন আর নতুন জীবন সৃষ্টি উভয়ক্ষেত্রেই প্রতিভাত হয় একদিকে প্রাকৃতিক হিসেবে অপরদিকে সামাজিক সম্পর্ক হিসেবে। সামাজিক বলতে আমরা বুঝি কিছু ব্যক্তির পারস্পরিক সহযোগিতা। কোন শর্তাধীনে, কোনভাবে বা কোন লক্ষ্যে তা কোন ব্যাপার নয়। এ থেকে বের হয়ে আসে উৎপাদনের নির্দিষ্ট ধরণ অথবা সমাজ স্তর; আর পারস্পরিক সহযোগিতার এই ধরণ খোদ নিজেই জ্ঞজ্ঞউৎপাদনী শক্তিঞ্চঞ্চ। তদুপরি মানুষের হাতে আসা উৎপাদনী শক্তির বহুত্ব সমাজের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। আর তাই মানবতার ইতিহাস অবশ্যই শিল্প আর বিনিময়ের ইতিহাসের সাপেক্ষে অধ্যয়ন ও বিবেচনা করতে হবে। তবে জার্মানীতে এ ধরণের ইতিহাস লেখা কতটা কঠিন তাও পরিষ্কার। কারণ জার্মানদের শুধু যে বুঝবার প্রয়োজনীয় শক্তি আর মালমশলার অভাব আছে তা-ই নয়, তাদের বোধেরও প্রমাণের ঘাটতি আছে। ইতিহাস থেমে যাওয়ার পর হতে রাইনের ওপারে কেউ এসব জিনিসের অভিঞ্চতা পাবেন না। এভাবে এটা শুরু থেকেই একদম পরিষ্কার যে মানুষের একে অপরের সাথে বস্তুগত সম্পর্ক আছে, যা তাদের প্রয়োজন আর উৎপাদনের ধরণ দিয়ে নির্দিষ্ট হয়, যা মানুষের নিজের মতোই পুরনো। এই সম্পর্ক সর্বদা নতুন আঙ্গিক নেয়, আর এভাবে যে কোন রাজনীতি বা ধর্মীয় হাবিজাবি থেকে স্বাধীন ইতিহাস উপস্থাপন করে। ঐসব হাবিজাবিগুলো মানুষকে একা-া করে তাদের নিজের খুঁটিতেই আটকে রাখে।
মৌলিক ঐতিহাসিক সম্পর্কের চারটি ক্ষণ, চারটি প্রেক্ষাপট বিবেচনার পরই কেবল এখন আমরা পাই যে, মানুষ চৈতন্যেরও মালিক; তারপরও এটি উত্তরাধিকারে পাওয়া নয়, পরম চৈতন্য নয়। শুরু থেকেই জ্ঞজ্ঞমর্মঞ্চঞ্চ, বস্তুর ভারবহনের অভিশাপে যন্ত্রণা ভোগ করছে। ঐ যন্ত্রণা এখানে নিজের প্রকাশ ঘটায় বাতাস, শব্দের বিক্ষুব্ধ স্তরের আঙ্গিকে, সংক্ষেপে ভাষায়। ভাষা চৈতন্যের সমান বয়সী, ভাষা হল হাতে-কলমের চৈতন্য। যেভাবে এটি অন্য মানুষের জন্য অস্তিত্বশীল সেভাবেই তা একই কারণে বাস্তবভাবে ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য অস্তিত্বমান হওয়া শুরু করে। কারণ চৈতন্যের মত ভাষাও কেবলমাত্র অভাব, প্রয়োজনীয়তা, অন্য মানুষদের সাথে মেলামেশা হতেই উঠে আসে। যেখানে কোন সম্পর্ক অস্তিত্বশীল, তা আমার জন্য অস্তিত্বমান : জানোয়ারের কোন কিছুর সাথে কোন সম্পর্ক নেই, থাকতেও পারেনা। জানোয়ারের জন্য, অন্যদের সাথে এর সম্পর্ক কোন সম্পর্ক হিসেবে অস্তিত্বমান নয়। চৈতন্য তাই একেবারে শুরু থেকে একটি সামাজিক উৎপাদ; আর যতদিন মানুষ অস্তিত্বশীল তা তেমনই থাকবে। চৈতন্য প্রথমেই, অবশ্যই শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ সংবেদনগত পরিবেশ সংক্রান্ত, তা যে ব্যক্তির আত্মচেতন হচ্ছে তাদের বাইরের জিনিস এবং মানুষদের সাথের সীমিত সম্পর্কের চৈতন্য। একই সময়ে এটি প্রকৃতির চৈতন্য যা মানুষের কাছে প্রতিভাসিত প্রথমে সম্পূর্ণ বিজাতীয়, সর্বক্ষমতাবান, অনতিক্রম্য শক্তি হিসেবে যার সাথে মানুষের সম্পর্ক নিখাদ জান্তব এবং যার দ্বারা তারা পশুর মত অতি ভীত; এটা এভাবে প্রকৃতির নিখাদ জান্তব চৈতন্য (প্রাকৃতিক ধর্ম)।
আমরা এখানে তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পাই : এই প্রাকৃতিক ধর্ম বা প্রকৃতির প্রতি এই জন্তুসুলভ আচরণ সমাজের আঙ্গিক দ্বারা নির্ধারিত হয়, উল্টোটাও সত্যি। অন্য সব জায়গার মত এখানেও প্রকৃতি এবং মানুষের অভিন্নতা এমন পথে প্রতিভাসিত হয় যে, প্রকৃতির সাথে মানুষের সীমাবদ্ধ সম্পর্ক তাদের একে অপরের সাথের সীমাবদ্ধ সম্পর্ক নির্দিষ্ট করে। আর তাদের একে অপরের সাথে সীমাবদ্ধ সম্পর্ক প্রকৃতির সাথে মানুষের সীমাবদ্ধ সম্পর্ক নির্ধারণ করে ঠিক এ কারণে যে- প্রকৃতি তখনো ঐতিহাসিকভাবে সামান্যই বিকশিত হয়েছে। আর অপরদিকে আরেকটা কারণ হচ্ছে মানুষের চারপাশের স্বতন্ত্রদের সাথে সংঘ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার চৈতন্য হচ্ছে, সে যে আদৌ সমাজে বাস করে সেই চৈতন্যঞ্চর সূত্রপাত। সমাজ জীবন এই স্তরে যে রকম এই সূত্রপাতটাও সে রকম জান্তব। এটা নিছক পাল বাধা চৈতন্য আর এ বিন্দুতে মানুষের সঙ্গে ভেড়ার পালের তফাৎ এটাই যে, তার প্রবৃত্তির জায়গায় আছে চৈতন্য অথবা তার প্রবৃত্তি চৈতন্যসম্পন্ন।
এই ভেড়াসুলভ বা গোত্র চৈতন্য আরো বিকাশ পায় আর বর্ধিত হয় বর্ধিত উৎপাদনশীলতা, বর্ধিত প্রয়োজন আর এ দুটোর জন্যই যা মৌলিক- জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে। এর সাথে সেখানে বিকশিত হয় শ্রম বিভাগ, যা আসলে ছিল লিঙ্গগত শ্রমবিভাগ। তারপর সেই শ্রম বিভাগ বাড়তে থাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা স্বাভাবিকভাবে(১৮) প্রাকৃতিক পূর্ববিন্যাসের (যেমন শারীরিক শক্তি, অভাব, আকস্মিকতা ইত্যাদি) মাঝ দিয়ে। শ্রম বিভাগ সত্যি সত্যিই এমন হয়ে যায় সে সময় থেকে যখন বস্তুগত এবং মানসিক শ্রমের বিভাজন আবির্ভূত হয়। এই ক্ষণ থেকে চৈতন্য এই ভেবে আসলেও নিজের পিঠ চাপড়াতে পারে যে, সে বহাল থাকা হাতে-কলমে কাজের চৈতন্য থেকে ভিন্ন কিছু, আর এই ভেবে যে সে কিছু একটা ধারণ করছে বাস্তবে কিছু ধারণ না করেই। এখন থেকে চৈতন্য এমন একটা অবস্থানে পৌঁছায় যেখান থেকে সে নিজের জগত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চায় আর শুদ্ধ তত্ত্ব, ধর্ম তত্ত্ব, দর্শন, নৈতিকতা ইত্যাদি গঠন করতে এগোনো শুরু করে। কিন্তু এই তত্ত্ব, ধর্ম তত্ত্ব, দর্শন, নীতি বিদ্যা এই সবও যদি বিদ্যমান সম্পর্কের সাথে ঠোকাঠুকি লাগায় তা হতে পারে একটিমাত্র ঘটনার ফল হিসেবে, তা হল বহাল সামাজিক সম্পর্কগুলো বহাল উৎপাদনী সম্পর্কের সাথে ঠোকাঠুকি লাগিয়েছে। উপরন্তু, এটা সম্পর্কের জাতীয় বৃত্তের ঠোকাঠুকির আবির্ভাবে, জাতীয় কক্ষপথে নয়, বরং এই জাতীয় চৈতন্যগুলোর মাঝে আর অন্য জাতির হাতে-কলমে কাজের ঠোকাঠুকির মাঝে। যেমন কোন জাতির জাতীয় ও সাধারণ চৈতন্যের মাঝে।
তদুপরি চৈতন্য নিজের মাঝেই যা করা শুরু করে তা একেবারেই ফালতু ব্যাপার: এরকম সব আবর্জনা থেকে আমরা এটুকু বের করে আনতে পারি যে এই তিনটি ক্ষণ, উৎপাদনের শক্তি, সমাজের দশা এবং চৈতন্য একে অপরের সাথে ঠোকাঠুকিতে আসতে পারে এবং অবশ্যই আসে। কারণ শ্রমের বিভাজন একটি সম্ভাবনা; না, ঠিক করে বললে একটি ঘটনার আভাস দেয়। তা হলো, মেধাগত এবং বস্তুগত ক্রিয়াকান্ড ও উপভোগ এবং শ্রম, উৎপাদন এবং ভোগ- ভিন্ন ব্যক্তিদের উপর ন্যস্ত, আর তাদের ঠোকাঠুকি না লাগার একটিমাত্র সম্ভাবনা নিহিত আছে এর শ্রম বিভাগের পালায় নেতিকরণে। তদুপরি এটা স্ব-প্রমাণিত যে এইসব ভূতুড়ে ছবি, বন্ধন, উচ্চতর সত্তা, ধারণা, নৈতিক দ্বিধাচ্ছন্নতা- এগুলো নিছক ভাববাদী, মরমী বহিঃপ্রকাশ, বিচ্ছিন্ন স্বতন্ত্রের প্রতীয়মান ধারণা, খুব অভিঞ্চতাগত শৃঙ্খল আর সীমাবদ্ধতার ছবি, যার মাঝে জীবনের উৎপাদনের ধরণ এর সাথে জোড় বাঁধা মেলামেশার আঙ্গিক সঞ্চালিত হয়।
শ্রমবিভাগের মাঝেই এই সব ঠোকাঠুকি অন্তর্শায়িত ছিল। আর তার নিজের ভিত্তি ছিল পরিবারে স্বাভাবিক শ্রমবিভাগ এবং পরস্পরবিরোধী স্বতন্ত্র পরিবারে সমাজের ছাড়াছাড়িতে। শ্রমবিভাগের সমান্তরালে প্রদত্ত হয় শ্রম এবং তার উৎপাদ এর বন্টন (পরিমাণগত ও গুণগত উভয়ই) যা আসলেই অসম। তাই সম্পত্তির কেন্দ্র, আদি আঙ্গিক থাকে পরিবারে- যেখানে স্ত্রী এবং সন্তানেরা স্বামীর দাস। যদিও খুব স্থুল, তবুও এই অদৃশ্য দাসত্বই প্রথম সম্পত্তি। কিন্তু এই প্রাথমিক দশাতেও এটি আধুনিক অর্থনীতিবিদদের বিশেষ সংঞ্চাটির সাথে নিখুঁতভাবে সম্পর্কিত। সংঞ্চাটি হল- অন্যের শ্রম শক্তি বেচাবিক্রি করার ক্ষমতা। শ্রম বিভাজন এবং ব্যক্তিসম্পত্তি সর্বোপরি অভিন্ন বহিঃপ্রকাশ : একটিতে যে জিনিস ক্রিয়াকান্ডের সাপেক্ষে স্বীকৃত, অপরটিতে তা ক্রিয়াকান্ডের উৎপাদের সাপেক্ষে স্বীকৃত।
শ্রমবিভাগ আরো আলাদা স্বতন্ত্র বা স্বতন্ত্র পরিবারঞ্চর স্বার্থ এবং পরস্পর মেলামেশা করা সমস্ত স্বতন্ত্রদের গণ স্বার্থের ঠোকাঠুকি। আর আদতে এই গণস্বার্থ সাধারণ শুভর মত শুধুমাত্র কল্পনায় থাকেনা, বরং তা প্রথমেই অস্তিত্বমান থাকে স্বতন্ত্রদের পরস্পরের আন্তঃনির্ভরশীলতা হিসেবে, যাদের মাঝে শ্রম বিভাজিত হয়। আর শ্রম বিভাজন চূড়ান্তভাবে আরেকটি জিনিসের প্রথম উদাহরণ দেয়। তা হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ স্বাভাবিক সমাজে রয়ে যায়,(১৯) (তার মানে যতক্ষণ বিশেষ ও সাধারণ স্বার্থে ফারাক থাকে, আর যতক্ষণ তাই ক্রিয়াকান্ড স্বেচ্ছাগত নয়, বরং প্রাকৃতিক, বিভক্ত) ততক্ষণ মানুষের নিজের কাজ হয়ে পড়ে তার বিরুদ্ধাচারী বিজাতীয় শক্তি, যা তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবার বদলে তাকেই দাস করে ফেলে। কারণ যখনই শ্রম ভাগ করে দেয়া হয়, প্রত্যেক মানুষকেই বাঁধা পড়তে হয় একটি নির্দিষ্ট, বিশেষ ক্রিয়াকান্ডের বলয়ে, যা তার ওপরে চাপিয়ে দেয়া হয়, যার থেকে সে পালাতে পারেনা। হোক সে একজন শিকারী, জেলে, রাখাল অথবা একজন জটিল সমালোচক, জীবিকাহীন হতে না চাইলে তাকে অবশ্যই ঐ পেশাতেই থাকতে হবে। যখন কমিউনিস্ট সমাজে কারোরই একটি বিশেষ কেন কাজ কারবার বলয় নেই, কিন্তু প্রত্যেকেই তার নিজের ইচ্ছামত যে কোন শাখায় দক্ষতা অর্জন করতে পারে। সাধারণ উৎপাদন সমন্বয় করবে সমাজ। আর এভাবে আমার পক্ষে সম্ভব হবে আজকে এক কাজ, কালকে আরেক কাজ করা। সকালে শিকার করবো, দুপুরে মাছ ধরবো, সন্ধ্যায় গরু-ছাগল গোয়ালে তুলবো, রাতের খাবারের পর সমালোচনা করবো; তার জন্য আমাকে শিকারী, জেলে, রাখাল বা সমালোচক হতে হবে না।
সমাজ ক্রিয়াকান্ডের দানা বাধা, (যা আমরা নিজেরা উৎপাদন করি আমাদের উপর একটি বিষয়মুখ শক্তি করে) আমাদের ওপর তার এই একত্রিভবন, আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া, আমাদের আশায় হতাশা, আমাদের হিসেবকে শূন্যতে নিয়ে আসা- এখন পর্যন্ত ঐতিহাসিক বিকাশের একটি প্রধান ব্যাপার। আর স্বতন্ত্র এবং গণস্বার্থের ঠিক এই ঠোকাঠুকি হতেই পরেরটি রাষ্ট্র হিসেবে একটি স্বাধীন আঙ্গিক পরিগ্রহ করে। এই আঙ্গিকটি স্বতন্ত্রের আর জনসম্প্রদায়ের বাস্তব স্বার্থ হতে তালাক পাওয়া আর একই সাথে জনসম্প্রদায়ের মায়া জীবন। তারপরও এর ভিত্তি সর্বদাই প্রতিটি পরিবার এবং গোত্র মিশ্রণে বহাল বাস্তব বন্ধন (যেমন রক্তমাংস, ভাষা, বড় মাত্রায় বিভাজিত শ্রম এবং অন্যান্য স্বার্থ)। এর আরেকটি বিশেষ ভিত্তি হল (পরে তা বিস্তারিত বলা হবে) শ্রেণীসমূহ, যা ইতঃমধ্যেই শ্রম বিভাজন দ্বারা নির্ধারিত, যা এরকম প্রতিটি জনগোষ্ঠীকে আলাদা করেও যার মাধ্যমে একজন বাকি সবার উপর প্রভাব বিস্তার করে। এথেকে বের হয়ে আসে যে, রাষ্ট্রের ভেতর সব সংগ্রাম, জনতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, রাজতন্ত্রের মাঝের লড়াই, ভোটাধিকারের লড়াই- এসব হেনতেন নিছক একটি মরীচিকা আঙ্গিক যাতে বিভিন্ন শ্রেণীর বাস্তব লড়াই সংগঠিত হয় একে অপরের সাথে (এ প্রসঙ্গে জার্মান তত্ত্ববাগীশরা একফোঁটা কালিও খরচ করেননি, যদিও তার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা তারা পেয়েছেন দি জার্মান-ফ্রেঞ্চ এনালস(২০) আর পবিত্র পরিবারে(২১)।
এখান থেকে আরো দেখা যায় যে প্রতিটি শ্রেণীকে (যে প্রভুত্বের জন্য সংগ্রাম করছে এমন কি তার প্রাধান্যের সময়েও, প্রলেতারিয়েতদের ক্ষেত্রে ঘটনাটা যেমন সমাজের পুরনো আঙ্গিকের সমগ্রতায়ও খোদ প্রভুত্বে উৎখাতের স্বীকার্য তৈরী করে) অবশ্যই প্রথমে নিজের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এই অর্জনের উদ্দেশ্য নিজের পালায় সাধারণ স্বার্থ হিসেবে আপন স্বার্থ প্রদর্শন। এটা এমন একটা ধাপ- প্রথম ক্ষণেই সে যাতে জোড় দিতে বাধ্য হয়। তা ঠিক একারণে যে, স্বতন্ত্রেরা একমাত্র তাদের বিশেষ স্বার্থ খোঁজে, তার মানে তাদের গণস্বার্থের সাথে মিলিত না হয়ে (কারণ সাধারণ ভাল হচ্ছে গণজীবনের মায়া আঙ্গিক)। গণস্বার্থ তাদের উপর উন্মোচিত হবে তাদের বিজাতীয় স্বার্থ রূপে, তাদের হতে স্বাধীন রূপে, যেমন এর নিজের বেলায় একটি বিশেষ, অদ্ভুত সাধারণ স্বার্থ; অথবা তারা অবশ্যই এই দ্বন্দ্বে মুখোমুখি দাঁড়াবে, যেমন হয় গণতন্ত্রে।(২২) অপরদিকেও, এই সব বিশেষ স্বার্থের হাতে-কলমের সংগ্রাম, যা নিরবচ্ছিন্নভাবে আসলেও আসল এবং মায়া জনসম্প্রদায়গত স্বার্থের বিপরীতে চলে, হাতে-কলমের হস্তক্ষেপ ঘটায় এবং মায়া জ্ঞসাধারণ স্বার্থঞ্চর মাধ্যমে রাষ্ট্রের আঙ্গিকে প্রয়োজনীয়টুকু নিয়ন্ত্রণ করে। সামাজিক শক্তি, মানে বহুগুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত উৎপাদনী শক্তি (যা উত্থিত হয় ভিন্ন স্বতন্ত্রদের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে যেমন করে তা শ্রম বিভাজনের মাঝে নির্ধারিত) এই সব স্বতন্ত্রদের কাছে আবির্ভূত হয় (যেহেতু তাদের সহযোগিতা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত নয়, বরং স্বাভাবিক) তাদের মিলিত শক্তি হিসেবে নয়, বরং তাদের বাইরে বহাল বিজাতীয় ক্ষমতা হিসেবে, যার শুরু আর লক্ষ্য সম্বন্ধে তারা অঞ্চ, যা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। যা উল্টো অদ্ভূত সব স্তর আর দশার ধারাক্রমের ভিতর দিয়ে পার হয়। ঐ স্তর আর দশাগুলো মানুষের ইচ্ছা আর কাজ হতে বাঁধন ছেঁড়া, যদিও তারাই এসবের চূড়ান্ত কর্তা।
এই বিচ্ছিন্নতা(২৩) (পরিভাষাটি দার্শনিকদের বুঝবার জন্য) অবশ্যই কেবলমাত্র প্রদত্ত দুটি হাতে-কলমে প্রাকসিদ্ধান্ত দিয়ে উচ্ছেদ করা যায়। এটি একটি অসহ্য শক্তি হতে হলে (মানে এমন একটি শক্তি যার বিরুদ্ধে মানুষ বিপ্লব করে) একে অবশ্যই প্রামাণিকভাবে বিশাল সংখ্যার মানবতাকে সম্পত্তিহীন করতে হবে, আর একই কালে সম্পদ এবং সংস্কৃতির বহাল জগতে ঠোকাঠুকি উৎপাদন করতে হবে। সম্পদ এবং সংস্কৃতি দুটোরই অবস্থা উৎপাদন শক্তির ব্যাপক বৃদ্ধি আর এর বিকাশের উচ্চমাত্রা পূর্বানুমান করে। আর অপরদিকে উৎপাদনী শক্তির এই বিকাশ (যা খোদ নিজেই মানুষের, স্থানীয় বা সত্তার বদলে,
বিশ্ব-ঐতিহাসিক বাস্তব অভিঞ্চতাগত অস্তিত্বের কথা বোঝায়) একটি হাতে-কলম প্রাকসিদ্ধান্ত হিসেবে অনস্বীকার্যরূপে প্রয়োজনীয়। প্রথমত এ কারণে যে এটি ছাড়া অভাব-ই শুধু সাধারণ হয়ে যায়; আর অভাবের সাথে সাথে প্রয়োজন পূরণের সংগ্রাম আর সব পুরনো বিচ্ছিরি কাজকারবার অনিবার্যভাবে পুনরুৎপাদিত হবে; আর দ্বিতীয়ত এ কারণে যে, কেবলমাত্র এই উৎপাদনী শক্তির সার্বজনীন এর সাথে মানুষের মাঝে বৈশ্বিক মেলামেশা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা প্রতিটি দেশেই যুগপৎভাবে সম্পত্তিহীন জনগণের প্রপঞ্চটি তৈরী করে (সার্বিক প্রতিযোগিতা), প্রতিটি দেশকে অপর দেশের উপর নির্ভরশীল করে, আর চূড়ান্তভাবে বিশ্ব-ঐতিহাসিক, বিপ্লবের অভিঞ্চতাগতভাবে সার্বিক স্বতন্ত্রকে দাঁড় করায় স্থানীয় স্বতন্ত্রে। এটি ছাড়া (১) কমিউনিজম টিকে থাকতে পারতো কেবল স্থানীয় ঘটনা হিসেবে; (২) মেলামেশার শক্তি নিজেরাও সার্বিক হিসেবে বিকশিত হতে পারতো না; তাই তা অসহনীয়ও হত না : তারা থেকে যেত ঘরোয়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন অবস্থা হয়ে; আর (৩) প্রতিটি মেলামেশার বিস্তৃতি স্থানীয় কমিউনিজমকে উৎখাত করতো। অভিঞ্চতাগতভাবে, কমিউনিজম সম্ভব কেবল আধিপত্যশীল জনগণের সহসা অথবা যুগপৎ কাজ হিসেবে, যা উৎপাদন শক্তির সার্বিক বিকাশ এবং এর সাথে যুক্ত বিশ্ব-মেলামেশা পূর্বানুমান করে। অন্য কোনভাবে কি সম্পত্তি আদৌ কোন ভিন্ন ইতিহাস, ভিন্ন আঙ্গিক নিতে পারতো? উদাহরণ হিসেবে- ভূমি সম্পত্তি, প্রদত্ত বিভিন্ন প্রাকসিদ্ধান্ত অনুসারে, ফ্রান্সে বহুখন্ড হতে গুটি কয়েকের হাতে কেন্দ্রীভূত হবার দিকে, ইংল্যান্ডে গুটিকয়েকের হাতে কেন্দ্রীভবন থেকে বহুখন্ডের দিকে এগিয়েছে? বর্তমানে ঘটনাটা আসলেও যা?(২৪) অথবা কেমন করে বাণিজ্য (যা আসলে সর্বোপরি অনেক স্বতন্ত্র আর দেশের মাঝের পণ্য বিনিময় ছাড়া কিছুই নয়) চাহিদা এবং যোগানের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে জগত শাসন করে? এ সম্পর্কটি, একজন ইংরেজ অর্থনীতিবিদ যেমন বলেন, পৃথিবীর উপর প্রাচীনদের ভাগ্যের মত ঘুরে বেড়ায়, অদৃশ্য হাতে কাউকে সৌভাগ্য কাউকে দূর্ভাগ্য বন্টন করে, সাম্রাজ্য গড়ে সাম্রাজ্য ধুলোতে মেশায়, জাতিগুলোকে জাগায়, আবার নিশ্চিহ্ন করে। অপরদিকে, ব্যক্তি সম্পত্তির ভিত্তি উৎখাত করে, উৎপাদনের কমিউনিস্টিক নিয়ন্ত্রণে (আর এর মাঝে লুকানো আছে মানুষ আর সে যা উৎপাদন করে- এ দুইয়ের বিজাতীয় সম্পর্কের উৎখাত) যোগান এবং চাহিদার সম্পর্কের শক্তিটি শূন্যে মেলায়? আর মানুষ বিনিময়ে আবার তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ফিরে পায় উৎপাদন, তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ধরণ- সবই?
আমাদের জন্য কমিউনিজম এমন কোন স্থিত দশা নয় যা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, কোন আদর্শ নয় যাতে বাস্তবতার নিজেকে খাপ খাওয়াতে হবে। আমরা কমিউনিজমকে বলি সেই বাস্তব সঞ্চালন যা জিনিসের বর্তমান দশাকে বিলোপ করে। বহাল প্রাকসিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ আসে এই সঞ্চালনের শর্তসমূহ। পাশাপাশি বিশ্ববাজার পূর্বানুমিত হয় সম্পত্তিহীন বিশাল সংখ্যার শ্রমিকদের দ্বারা- শ্রম শক্তি বিশাল পরিমাণে বাদ দেয়া হয় পুঁজি বা এমনকি ন্যূনতম সন্তোষ থেকে। আর তাই, বিশ্ববাজার আর নিছক শ্রমের অনিশ্চয়তা দিয়ে পূর্বানুমিত হয় না, যা নিশ্চিত জীবিকা না দিয়ে প্রায়ই প্রতিযোগিতার মাঝ দিয়ে হারিয়ে যায়। এভাবে, প্রলেতারিয়েত কেবলমাত্র বিশ্ব-ঐতিহাসিকভাবে টিকতে পারে; ঠিক যেমন এর সঞ্চালন, কমিউনিজম, বিশ্ব-ঐতিহাসিকভাবেই অস্তিত্ব পেতে পারে। স্বতন্ত্রের বিশ্ব-ঐতিহাসিক অস্তিত্ব মানে বিশ্ব-ইতিহাসের সাথে সরাসরি জড়িত স্বতন্ত্রদের অস্তিত্ব।
সমস্ত বিগত ঐতিহাসিক দশায় বহাল উৎপাদনী শক্তি দ্বারা নির্ধারিত মেলামেশার আঙ্গিক এবং এর পালায় এগুলো নির্ধারণ করাই হল সিভিল সমাজ।(২৫) উপরে আমরা যেমন বললাম তা থেকে পরিষ্কার যে, এর ক্ষেত্র এবং ভিত্তি হিসেবে আছে সরল পরিবার আর বহু তথাকথিত গোত্র, যার আরো মোদ্দা নির্ধারণ আমাদের উপরের বক্তব্যে ব্যাপক সংখ্যায় আছে। ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি, কেমন করে এই সিভিল সমাজ সমস্ত ইতিহাসের বাস্তব উৎস এবং মঞ্চ। আর এও দেখি এখন পর্যন্ত ধরে রাখা ইতিহাসের ধারণা কতটা বেকুবী করে, যখন তা বাস্তব সম্পর্ক অবহেলা করে নিজেকে রাজরাজত্বের উচ্চনিনাদী নাটুকেপনায় আবদ্ধ রাখে। সিভিল সমাজ, উৎপাদনী শক্তির বিকাশের একটি নির্দিষ্ট দশার সমস্ত বস্তুগত মেলামেশাকে আলিঙ্গন করে, যতটা রাষ্ট্র এবং জাতি অতিক্রম করে। যদিও আবার অন্য দিকে, একে অবশ্যই বিদেশী মানুষের কাছে নিজেকে জাতীয়তা বলে বুঝ দিতে হয় আর ভেতরে নিজেকে সংগঠিত করতে হয় রাষ্ট্র হিসেবে। সিভিল সমাজ শব্দটি জন্ম নেয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে, যখন সম্পত্তি সম্পর্ক ইতঃমধ্যেই নিজেকে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় জনসম্প্রদায় সমাজ থেকে আলাদা করে নিয়েছে। এরকম সিভিল সমাজ কেবলমাত্র বুর্জোয়াদের সাথে গড়ে উঠে; যে সমাজ সরাসরি উৎপাদন এবং বাণিজ্যের ভেতর হতে উঠে আসে যা সব কালেই রাষ্ট্র এবং বাকি ভাবগত উপরিসৌধ গড়ে তোলে। এটাই, যা হোক, সব সময়ই এক নামে পরিচিত।